ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে বাইকের ব্যবহার বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। কারণ, বাংলাদেশের কৃত্রিম সমস্যাগুলোর একটি হলো যানজট, যা কাজে যাতায়াত করতে গিয়ে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে। আর বাইক ব্যবহার করে কম সময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে অধিকাংশ যানজটপূর্ণ রাস্তা পার করা সম্ভব। তাছাড়া, বাংলাদেশী যুবকদের বাইকের প্রতি আলাদা আবেগ রয়েছে, যা অন্যান্য যানবাহনের জন্য বিরল। এমনকি বাংলাদেশী যুবকরাও মোটরসাইকেলের ব্র্যান্ড এবং মোটর বাইকের মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কৌতূহল প্রকাশ করে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে বাইকের দাম ব্র্যান্ড, মডেল, ইঞ্জিন সিসি, টপ স্পিড, মাইলেজ এবং ডিজাইন সহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। চলুন জেনে নেই শীর্ষ ১০টি ট্রেন্ডিং বাইক সম্পর্কে যা সম্প্রতি বাংলাদেশের বাইক ব্যবহারকারীদের শীর্ষ পছন্দ।
- সুজুকি জিক্সারঃ সুজুকি জিক্সার বাইক বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের বাইকারদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে। সুজুকি জিক্সার বাইকের মডেল ভেদে সাধারণত প্রতি লিটার জ্বালানি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশে অনুমোদিত সুজুকি জিক্সার বাইকে ১৫৫ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন রয়েছে যা প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। তাছাড়া, সুজুকি জিক্সার বাইকের মডেল ভেদে এর দাম কম-বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে, বাংলাদেশে সুজুকি জিক্সার বাইকের মধ্যে, সুজুকি জিক্সার নিউ এসএফ ১৫০ এবিএস, সুজুকি জিক্সার এসএফ ১৫০ (ওল্ড অ্যাডিশন), সুজুকি জিক্সার ১৫০ (নিউ অ্যাডিশন), সুজুকি জিক্সার ডাবল ডিস্ক, এবং সুজুকি জিক্সার সিঙ্গেল ডিস্ক মডেল বেশ জনপ্রিয়।
- ইয়ামাহা আর১৫ঃ ইয়ামাহা আর১৫ বাইক আকর্ষণীয় রেসিং বাইক ডিজাইনের হয়ে থাকে ফলে, বাংলাদেশের বাইকারদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। ইয়ামাহা আর১৫ বাইকে লিকুইড কুলড ইঞ্জিন থাকে ফলে ইঞ্জিনের ভাইব্রেশন কম হয় এবং স্থিতিশীল কর্মক্ষমতা পাওয়া যায়। এছাড়া, ইয়ামাহা আর১৫ বাইকের মডেল ভেদে প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৪৮ থেকে ১৫৩ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে বিধায় বাংলাদেশে গতি দানব নামেও পরিচিত। তবে, ইয়ামাহা আর১৫ বাইকের দাম তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। সম্প্রতি, বাংলাদেশে ইয়ামাহা আর১৫ বাইকের মধ্যে ইয়ামাহা আর১৫এম, ইয়ামাহা আর১৫ ভি৪, ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ ইন্ডিয়ান, ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ মন্সটার, এবং ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ ইন্দোনেশিয়ান মডেল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
- বাজাজ পালসারঃ বাজাজ পালসার বাইক তুলনামূলক উন্নত গুণমানের হয়ে থাকে বিধায় বাংলাদেশে এর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। বাজাজ পালসার বাইকে মডেল ভেদে সিঙ্গেল ডিস্ক ব্র্যাকিং সিস্টেম অথবা ডাবল ডিস্ক ব্র্যাকিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত থাকে ফলে বাইকাররা প্রয়োজন অনুসারে নিজের জন্য উপযুক্ত বাইক নির্বাচন করতে পারে। বেশীরভাগ বাজাজ পালসার বাইকে এয়ার কুলড ইঞ্জিন রয়েছে যা এটিকে জ্বালানী সাশ্রয়ী করে তোলে। বাংলাদেশে অনুমোদিত বাজাজ পালসার বাইকের মডেল ভেদে ইঞ্জিন কিউবিক ক্যাপাসিটি সর্বনিম্ন ১২৪.৪ সিসি থেকে ১৬৪.৮ সিসি পর্যন্ত রয়েছে। এবং, বাজাজ পালসার বাইকের মাইলেজ তুলনামূলক বেশী হয়ে থাকে। তাছাড়া, বাজাজ বাইকের দাম মডেল ভেদে কম-রেঞ্জ থেকে মধ্যম রেঞ্জ বাজেটের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বাজাজ পালসার বাইকের মধ্যে, বাজাজ পালসার নিয়ন ১৫০ (ডিস্ক), বাজাজ পালসার ১৫০ এবিএস, বাজাজ পালসার ১৫০ টুইন ডিস্ক, বাজাজ পালসার ১৫০ সিঙ্গেল ডিস্ক, বাজাজ পালসার এন১৬০ (এফআই, এবিএস), বাজাজ পালসার এনএস১৬০ (এফআই, এবিএস), এবং বাজাজ পালসার এনএস ১৬০ (ডিডি) মডেল চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।
- কেটিএম বাইকঃ কেটিএম বাইক সাধারণত স্পোর্টস বাইক ডিজাইনের হয়ে থাকে যা বাংলাদেশের বাইকারদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কেটিএম বাইকে ডাবল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ফলে জরুরী মুহূর্তে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ব্রেক করতে কার্যকর। বর্তমানে, ১২৫ সিসি ইঞ্জিন ক্যাপাসিটির মধ্যে কেটিএম বাইক বাংলাদেশে পাওয়া যায়। কেটিএম বাইকের দাম সাধারণত উচ্চ-রেঞ্জ বাজেটের হয়ে থাকে। তাছাড়া, বাংলাদেশে কেটিএম বাইকের মধ্যে কেটিএম আরসি ১২৫ (ইন্ডিয়ান), কেটিএম ১২৫ ডিউক (ইউরোপীয়), কেটিএম আরসি ১২৫ (ইউরোপীয়), এবং কেটিএম ১২৫ ডিউক (ইন্ডিয়ান) মডেল ব্যাপক জনপ্রিয়।
- টিভিএস অ্যাপাচিঃ টিভিএস অ্যাপাচি বাইক তুলনামূলক স্টাইলিশ এবং বাজেট বান্ধব হয়ে থাকে ফলে, বাংলাদেশের যুবকদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিভিএস অ্যাপাচি বাইকের ইঞ্জিন কিউবিক ক্যাপাসিটি ১৫৯.৭ সিসি হয়ে থাকে যা প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১১৩ কিমি থেকে ১১৮ কিমি গতিতে চলতে পারে। বাংলাদেশে টিভিএস অ্যাপাচি বাইকের জনপ্রিয় মডেল হলোঃ টিভিএস অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি এবিএস, টিভিএস অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি ডিডি, টিভিএস অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি এসডি, টিভিএস অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ এবিএস, এবং টিভিএস অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ এসডি।
- হোন্ডা লিভোঃ বর্তমানে, বাংলাদেশে কমদামের মোটরসাইকেল হিসেবে হোন্ডা লিভো অত্যাধিক জনপ্রিয়। তাছাড়া, হোন্ডা লিভো মডেলের বাইক কমদামে পাওয়া যায় ফলে, রাইড শেয়ার ও খাবার বা পণ্য নির্দিষ্ট স্থানে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে হোন্ডা লিভো বাইকের মধ্যে জনপ্রিয় মডেল দুটি হলোঃ ১। হোন্ডা লিভো ডিস্ক ব্রেক এবং ২। হোন্ডা লিভো ড্রাম ব্রেক। তাছাড়া, হোন্ডা লিভো বাইক প্রতি লিটার জ্বালানি ব্যবহার করে ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
- কাওয়াসাকি নিনজাঃ কাওয়াসাকি নিনজা বাইকের আকর্ষণীয় চেহারা এবং শক্তিশালী ইঞ্জিনের কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছে। বর্তমানে, কাওয়াসাকি নিনজা বাইক উচ্চ বাজেটের সেরা বাইকের তালিকায় রয়েছে। তাছাড়া, কাওয়াসাকি নিনজা বাইকে লিকুইড কুলড ১২৫ সিসি ইঞ্জিন রয়েছে এবং প্রতি লিটার জ্বালানি ব্যবহার করে ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশে কাওয়াসাকি নিনজা বাইকের জনপ্রিয় মডেল হলো কাওয়াসাকি নিনজা ১২৫ এবিএস।
- হিরো হাঙ্কঃ বাংলাদেশে মধ্যম বাজেটের বাইক হিসেবে হিরো হাঙ্ক বাইক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। হিরো হাঙ্ক বাইকের ডিজাইন তুলনামূকল স্ট্যান্ডার্ড যা যেকোনো বয়সের বাইকারের জন্য উপযুক্ত। তাছাড়া, হিরো হাঙ্ক বাইকে সাধারণত এয়ার কুলড ১৪৯.২ সিসি ইঞ্জিন অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং প্রতি লিটার জ্বালানি ব্যবহার করে ৪৫ কিলোমিটার পথ সহজেই অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশে হিরো হাঙ্ক বাইকের মধ্যে হিরো হাঙ্ক ১৫০ আর এবিএস, হিরো হাঙ্ক ১৫০ আর ডিডি, হিরো হাঙ্ক ম্যাট ফিনিশিং, এবং হিরো হাঙ্ক গ্লসি ফিনিশিং হলো অন্যতম জনপ্রিয় মডেল।
- বাজাজ ডিসকভারঃ বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মাইলেজের বাইক হিসেবে বাজাজ ডিসকভার বাইকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাজাজ ডিসকভার বাইকের মডেল ভেদে প্রতি লিটার জ্বালানিতে ৫৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। তাছাড়া, বাজাজ ডিসকভার বাইকে ডিস্ক ব্রেকিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে বাজাজ ডিস্কভার বাইক হলো বাজাজ ডিসকভার ১২৫ এবং বাজাজ ডিসকভার ১১০ যা কমদামে পাওয়া যায়।
- রয়েল এনফিল্ড বাইকঃ রয়েল এনফিল্ড বাইকের রাজকীয় ডিজাইনের কারণে বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে। রয়েল এনফিল্ড কোম্পানি সাধারণত সর্বোচ্চ ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি সম্পন্ন বাইক সরবরাহ করে থাকে। বিশেষ করে লম্বা ট্রিপ এর জন্য রয়েল এনফিল্ড বাইক উপযুক্ত। তাছাড়া, রয়েল এনফিল্ড বাইকের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি হয়। তবে, রয়েল এনফিল্ড বাইকে ইঞ্জিনের কিউবিক ক্যাপাসিটি ১৬৫ সিসি এর বেশি হয়ে থাকে তাই বাংলাদেশে এর বৈধতা নেই।